বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসঃ ক্ষেত-খামার থেকে পাতে; খাদ্য রাখবো নিরাপদে

মো: সাইফুল ইসলাম

আজ ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রতি বছর নতুন নতুন সমকালীন স্বাস্থ্য ইস্যু বেছে নিয়ে দিবসটি উৎযাপন করে। ইস্যু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মূলত এমন একটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয় যা সারা বিশ্বের জন্যই সমধিক গুরুত্ব বহন করে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে  “ Food Safety”
শ্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘From farm to plate, make food safe’ অর্থাৎ ক্ষেত-খামার থেকে পাতে; খাদ্য রাখবো নিরাপদে”। সারাবিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও গুরুত্বের সাথে দিবসটি পালিত হয়।world health day 2015
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চ্যান বলেন- খাদ্য আজকাল শিল্প-কারখানায় উৎপাদনের রুপ নিয়েছে এবং এর ব্যবসা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। আর এই কারনে খাবার বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী ও রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা দূষিত হচ্ছে। এসব দূষিত খাবার থেকে ২০০ এরও অধিক রোগ হতে পারে। প্রতিবছর অনিরাপদ ও দূষিত খাবার গ্রহণের ফলে ২ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শুধু ডায়রিয়া কিংবা আমাশয় নয় ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে! আমাদের প্রাপ্ত খাবারগুলো প্রধানত আসে প্রাণী, ফলমূল এবং শাক-সবজি থেকে। এসব খাবার গোবর, মাটি ও পানি দ্বারা দূষিত হতে পারে। মাছ বিশেষত খোলসযুক্ত মাছগুলো জৈব বিষ দ্বারা দূষিত হতে পারে। অর্ধসিদ্ধ খাবার থেকে রোগ বেশি ছড়াতে পারে।

দেখে নেয়া যাক WHO এর একটি ইনফোগ্রাফ। আপনার খাদ্যে কোন কোন জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে !!
দেখে নেয়া যাক WHO এর একটি ইনফোগ্রাফ। আপনার খাদ্যে কোন কোন জীবাণুর আক্রমণ হতে পারে !!

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন Foodborne Disease Burden Epidemiology (FERG) এর তথ্যমতে খাদ্য থেকে ছড়ানো রোগ বিশ্বের প্রধান বোঝায় পরিণত হয়েছে।
FERG এর তথ্যমতে পাওয়া কিছু ভয়াবহ তথ্য,
১. সারাবিশ্বে ২২ ধরনের খাদ্যবাহিত আন্ত্রিক রোগে আক্রান্ত ৫৮২ মিলিয়ন ব্যক্তি পাওয়া যায় যার মধ্যে ৩৫১০০০ এর মৃত্যু হয়েছে।
২. সাধারনত সালমোনেলা টাইফি (Salmonella typhi), ই. কোলাই (Enteropathogenic E. coli) এবং নরো ভাইরাস (Norovirus) দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়।
৩. আফ্রিকার দেশগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেশি। আর এরপরই আছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।
৪. খাদ্য বাহিত আন্ত্রিক রোগে ৪০ ভাগেরও অধিক আক্রান্ত হচ্ছে ৫ বছরের কম বয়সী শিশু।

আরও একটি ইনফোগ্রাফ যেখানে খাদ্য দূষিত হবার একটি চক্র দেখানো হয়েছে।
আরও একটি ইনফোগ্রাফ যেখানে খাদ্য দূষিত হবার একটি চক্র দেখানো হয়েছে।

অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে বাংলাদেশে সাধারণত ডায়রিয়ায় আক্রান্তের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১০০০০ এরও অধিক মানুষ মারা যায় ডায়রিয়ায়।
মূলত অধিকাংশ রোগই খামার পর্যায় থেকে মানুষে আসে। আমাদের দেশে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যানথ্রাক্স, র‌্যাবিস, নিপাহ, পরজীবী ঘটিত রোগের মাঝে আছে গোলকৃমি ইত্যাদি রোগগুলো প্রাণী থেকে ছড়ায়। কৃষি জমি থেকেও নানা ধরনের জীবাণু ছড়ায়। তাছাড়াও ফসলি জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। অনিরাপদ পানি খেয়ে ছড়াচ্ছে আমাশয়, ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েড সহ নানা রকমের রোগ।

রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের কতিপয় বিষয়ের উপর নজর রাখতে হবে। সেগুলো হল-

ক. রান্না: মাংস ও ডিম পর্যাপ্ত পরিমাণ তাপমাত্রায় সিদ্ধ করবেন। ডিমের কুসুম শক্ত না হওয়া পর্যন্ত সিদ্ধ করবেন।
খ. আলাদা রাখা: বিভিন্ন খাবারকে আলাদা আলাদা রাখবেন। এতে একই খাবারের জীবাণু সব খাবারে যাওয়ার সম্ভাবনামুক্ত থাকবে।
গ. হিমায়িতকরণ: সাধারণত ব্যাকটেরিয়া কক্ষ তাপমাত্রায় খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই ৪ ঘন্টার মধ্যে খাবারটি না খেতে চাইলে তা রেফ্রিজারেটরে রাখতে হবে।
ঘ. পরিষ্কারকরণ: তাজা ফলমূল ও শাক-সবজিকে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
ঙ. তথ্য প্রদান: কোথাও কোন রোগ দ্রুত ছড়ালে স্থানীয় হাসপাতালে দ্রুত তথ্য প্রদান করতে হবে।
চ. এছাড়াও খাবার তৈরির পূর্বে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে রান্নার কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং খাবার তৈরির সময় শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তন করা যাবে না।

লেখক: চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics