বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস; সহজেই জেনে নিন রোগ বৃত্তান্ত!
সিফাত তাহজিবা
আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। ‘হেপাটাইটিস’; মারাত্বক এই সংক্রামক রোগটিকে বাংলায় ‘যকৃতের বা লিভারের প্রদাহ’ও বলা হয়ে থাকে। মানব দেহে হেপাটাইটিস বিভিন্ন ভাইরাসের মাধ্যমে বাসা বাঁধে। এ পর্যন্ত ৪ প্রকারের হেপাটাইটিস চিহ্নিত করা গিয়েছে, যেগুলোকে বলা হয়-হেপাটাইটিস এ,বি,সি,ডি এবং ই।
এ রোগের বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। রোগটির ভাইরাস; খাদ্য,পানি এবং রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। হেপাটাইটিসের ভাইরাস বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী যকৃতের রোগ ঘটাচ্ছে। এমনকি প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং সি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে।
এই সংক্রামক রোগটি প্রতিরোধ করা যায় কিন্তু অধিকাংশ মানুষই সে ব্যাপারে সজাগ নন। ‘হেপাটাইটিস সি’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর এবং মারাত্বক। তবে বাংলাদেশে ‘হেপাটাইটিস ই’ আক্রান্ত রোগী সবচেয়ে বেশি।
বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবসে ‘ওয়ার্লড হেল্থ অর্গানাইজেশন’ (ডব্লিও.এইচ.ও.) মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ৪ টি ধাপে বার্তা প্রকাশ করেছে। সেগুলো হলো-
ঝুঁকি : রক্তে জীবানু আছে কিনা তা পরীক্ষা না করে রক্ত (জীবানুসহ) আদান-প্রদান করলে এবং একই সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক গ্রহণ করলে এই রোগ ছড়ায়।
অনিরাপদ ইনজেকশন : প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হচ্ছে এই অনিরাপদ ইনজেকশন দেওয়ার কারণে। জীবানু মুক্ত সূঁচ/সিরিঞ্জ দিয়ে ইনজেকশন দিতে হবে এবং প্রতিটি সিরিঞ্জ একবার মাত্র ব্যবহার করতে হবে।
শিশুকে টিকা প্রদান : হেপাটাইটিসের টিকা যথাসময়ে নিতে হবে।
হেপাটাইটিস পরীক্ষা : হেপাটাইটিসের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত কি না তা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
হেপাটাইটিস সাধারণত জন্ডিসের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায়। এছাড়া রোগীর দেহে হেপাটাইটিসের উপসর্গসমূহ সবসময় বুঝা না গেলেও; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেগুলো বুঝতে পারা মাত্রই রোগীকে অবশ্যই নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে। লক্ষঙুলো হলো-
• তীব্র জ্বর সাথে দুর্বলতা।
• বমি বা বমিবমি ভাব এবং মাথা ব্যথা করা।
• পেটের উপরের ডান দিকে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
• যকৃত বড় হয়ে যাওয়া।
• শরীরে ব্যথা অনুভত হওয়া।
• চোখ ও দেহের ত্বক হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
• প্রস্রাব গাঢ় হলুদ এবং মলের রং হালকা হয়ে যাওয়া।
• ডায়রিয়া
রোগ প্রতিরোধের পূর্বশর্ত হল সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এছাড়াও-
• নিরাপদ পানি পান করা
• বাসি-পঁচা খাবার পরিহার করা
• সঠিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
• মলমুত্র ত্যাগের পর নিয়মিত হাত ধোঁয়া।
শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে; রক্ত পরীক্ষা করে দেখতে হবে। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে, কম চর্বিযুক্ত খাবার আর সাথে প্রচুর পানীয় খেতে হব, প্রোটিন এবং ভিটামিন সি জাতীয় ফল খেতে হবে।