বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস ২০১৫: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ !
এমন যদি হতো, আমি পাখির মত, উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ! খুব ভালো হতো তাহলে, তাই না? পাখির মত জীবনের একটা আকাংক্ষা ছোটোবেলার সেই পবিত্র শিশুমনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের প্রায় সকলের। আকাশে কী আনন্দে, কী ফুরফুরে মেজাজে ঘুরে বেড়ায় পাখিরা! স্থলের মত কোনো সীমানা বাঁধা নেই, কোনো কাঁটাতারের বেড়া নেই, আছে অবারিত খোলা আকাশ। যেখানে খুশি যাওয়া যায়, যে দেশে খুশি উড়ে যাওয়া যায়, কোনো পাসপোর্ট-ভিসারও ঝামেলা নেই! ছোটবেলার কথা না হয় বাদই দিলাম, এমন চিন্তা কি বড়বেলাতেও মাঝে মাঝে তাড়া করে বেড়ায় না? সে যাই হোক, সেই ভসীমানা পেড়োতে ভালবাসে যেসব পাখিরা, সেইসব ভ্রমণপিপাসু পাখিদের কে এক কথায় আমরা চিনি পরিযায়ী পাখি হিসেবে। আবহাওয়া কিংবা খাবারের কারণে এরা ফি বছর নির্দিষ্ট সময়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যায়। প্রকৃতির অনেক রহস্যের মত এই ব্যাপারটিও ঘটেই চলেছে নিয়ম করে। গবেষকদের দৃষ্টি যখন পরিযায়ী পাখিদের উপর পড়লো, তখন থেকে একটি দিবস ঘোষণা করা হলো, “বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস”। এ বছর মে মাসের ৯ ও ১০ তারিখ সারাবিশ্বে পালিত হবে দিবসটি। মূলত পরিযায়ী পাখি সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যেই বিশেষভাবে উদযাপন করা হয় দিবসটি। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়, ‘এনার্জি, মেক ইট বার্ড ফ্রেন্ডলি!’
ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ২০১৩ সাল থেকে যৌথভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর, আসছে মে মাসের ৯ তারিখ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সারাদিনব্যাপী নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি উৎসব পালন করা হবে। বিশ্বব্যাপী মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহকে এই দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। আর এবারের এই উৎসবে স্বণামধন্য পাখি গবেষকদের আনা-গোনা যেমন থাকবে, তেমনি শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী মানুষদের জন্য অপেক্ষা করছে চমৎকার কিছু আয়োজন। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সরব উপস্থিতি তো থাকছেই। ৯ তারিখের আয়োজন নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা কিন্তু এখন তুমুল ব্যস্ত! চলুন, কিছুটা জেনে আসি তাঁদের আয়োজন সম্পর্কে!
বিশ্ব পরিযায়ী পাখি উৎসবের অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ৯ টায়, আয়োজকদের অভিষেক এবং সম্মানিত অতিথিদের পাখি বিষয়ক আকর্ষণীয় বক্তব্যের পর পরই র্যালি নিয়ে বের হবেন তাঁরা। সাথে তো শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি থাকছেই।
পাখি নিয়ে বিতর্ক!
এপ্রিল মাসের ১৮ ও ২৫ তারিখে দুই ধাপে বিতর্ক প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। দুটি বিভাগ রয়েছে। ক বিভাগে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর মধ্যকার বিতর্ক হয় এবং খ বিভাগে হয় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক। ‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রামপাল নয় সুন্দরবনই মুখ্য।’ ক- বিভাগের জন্য বরাদ্দ এই বিষয়ে তর্কযুদ্ধ করে নটরডেম কলেজকে পেছনে ফেলে প্রথামিক বাছাই পর্ব থেকে উঠে আসে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তাঁরা চূড়ান্ত পর্যায়ে মুখোমুখি হবে প্রাথমিক পর্বে বিজয়ী আরক দল, সেন্ট গ্রেগরী স্কুলের! এবারে খ বিভাগের পালা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি দলের প্রাণচঞ্চল মুখরিত যুক্তির মিছিলে, নানান চড়াই-উৎড়াই পেড়িয়ে চূড়ান্ত পর্বে মুখোমুখি হওয়ার টিকিট পেয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশবিদ্যালয়! তাঁদের বিষয় ছিলো- ‘পাখির আবাসস্থল ধ্বংসে নগরায়ণই মুখ্য।’ ৯ তারিখ এই তর্কযোদ্ধাদের জন্য অপেক্ষা করছে চমকপ্রদ এবং সম-সাময়িক কোন না কোনো বিষয়। এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা, দেখা যাক যুদ্ধ শেষে বিজয়মাল্য কাদের গলায় স্থান পায়!
সকাল ১০:৩০ এই শুরু হয়ে যাবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা!
রঙ তুলির আঁচড়ে পাখি ও প্রকৃতির ছবি আঁকবে শিশুরা। এখানেও দুটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। তবে বিতর্ক প্রতিযোগিদের থেকে মূল পার্থক্য হচ্ছে, অংকন প্রতিযোগীদের বয়স আক্ষরিক অর্থেই অনেক অল্প! ক বিভাগে ১ম শ্রেণি থেকে ৩য় শ্রেণি এবং খ বিভাগে ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিশুদের সুযোগ দেয়া হবে। কাজেই, অংকন যুদ্ধের জন্য রং-পেন্সিল, রং-তুলি যা যা হাতিয়ার আছে, সব সাথে করে নিয়ে চলে আসতে হবে এই মহামান্য যোদ্ধাদের। ৯ তারিখ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই রেজিস্ট্রেশন করে ফেলতে হবে আগে-ভাগে। তারপরেই সকাল ১০:৩০ টা নাগাদ শুরু হয়ে যাবে কঁচি-কাঁচা দের কিঁচির-মিঁচির পাখি আঁকার প্রতিযোগিতা!
পাখি নিয়ে কিরকম খেলা?
বাকি রইলো ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির কিশোর-কিশোরিরা। এবারই প্রথমবারের মত তাঁদের জন্য রাখা হয়েছে একটি মজার খেলা! কিছুটা চমক নাহয় থাকুক, তবে একটু সাহায্য করয়াই যায়, বুদ্ধির খেলায় জয়ী হতে হলে কিন্তু মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা চাই! সে হিসেবে পরিযায়ী পাখিদের সম্পর্কে একটু জ্ঞান থাকা জরুরি, পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পাখিদের ছবিগুলোই না হয় ভালভাবে দেখে এসো! এই বিভাগের প্রতিযোগিরাও উক্ত দিনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারবে। দুপুর ১২:৩০ টা নাগাদ শুরু হবে এই আয়োজনটি।
ক্যামেরার চোখে পাখি!
অন্যতম মূল আকর্ষণ আলোকচিত্রীদের জন্য, সেই সাথে জনসধারণের জন্যেও বটে! ইতিমধ্যে বিপুল আলোকচিত্রের মধ্য থেকে বাছাই করে ৪৮ টি আলোকচিত্র চূড়ান্ত পর্বের প্রদর্শনীর জন্য বাছাই করা হয়েছে। অডিটরিয়ামে সারাদিনব্যাপী ঝুলবে সেইসব মূল্যবান প্রাণবন্ত আলোকচিত্রগুলো।
এছাড়াও আরো কিছু চমক রয়েছে। এই যেমন, ১১:৫০ নাগাদ শুরু হবে কুইজ প্রতিযোগিতা, আর এর জন্য নেই কোনো আলাদা বিভাগের বন্টন। উপস্থিত সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারবেন সেই প্রতিযোগিতায়। পাখি বিষয়ক ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করা হবে। জানা যাবে অনেক অজানা জিনিস, কৌতুহলের দরজা খুলতে থাকবে এক এক করে। বিস্ময় ভরা চোখ দেখতে পাবে অনেক কিছুই!
আরেকটি মজার পর্ব আছে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পরই শুরু হবে সেটি। এই পর্বটির মূল আকর্ষণ হলো,পাখি পরিচিতি! আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিতে এই পাখি চেনার প্রতিযোগিতাটি পরিচালিত হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে যাঁরা থাকছেন-
প্রধান অতিথি-
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, উপাচার্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, অধ্যাপক মো. সেলিম ভুইঁয়া, ট্রেজারার ; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক সাজেদা বেগম (চেয়ারম্যান; প্রাণিবিদ্যা বিভাগ- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), জালাল আহমেদ (অতিরিক্ত সচিব; অর্থ মন্ত্রণালয়), এবং মুকিত মজুমদার বাবু (চেয়ারম্যান; প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন)
সমগ্র অনুষ্ঠানটি সচল রাখতে এগিয়ে এসেছে কিছু প্রতিষ্ঠান, যাঁরা একাগ্রচিত্তে সাথে থেকেছেন সবসময়।
১/ প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন
২/ বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব
৩/ বাংলাদেশ নিটওয়্যার মেনুফ্যাকচারারর অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বি.কে.এম.ই.এ.)
৪/ মোবিন পাবলিকেশন
আর মিডিয়া পার্টনার হিসেবে থাকছে এনভায়রনমেন্টমুভ ডট কম।
উৎসব জুড়ে সমস্ত দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু স্টল থাকবে। আপনারা ঘুরে আসতে পারবেন সেসব স্টলে, যুক্ত হতে পারবেন তাঁদের সাথে একেবারে সরাসরি!
যেসব স্টল থাকছে-
১/ প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন
২/ বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব
৩/ ন্যাচার স্টাডি অ্যান্ড কনজারভেশন ক্লাব
৪/ ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিয়্যু সেন্টার (ডব্লিউ.আর.সি.)
৫/ বাংলাদেশ সিটাশিয়ান ডাইভার্সিটি প্রজেক্ট (বি.সি.ডি.পি.) এবং
৬/ এনভায়রনমেন্টমুভ ডট কম
৭/ নেচার কনজারভেশন ইনিসিয়েটিভ
সচেতনতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কার ও সনদ পত্র প্রদানের মধ্য দিয়ে এ বছরের মত বিশ্ব পরিযায়ী পাখি উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। আবার অপেক্ষা শুরু হবে সামনের বছরের জন্য। সমস্ত দিনটি পরিযায়ী পাখিদের জন্য উৎসর্গ করে, পাখিদেরই আবেশে ক্ষানিকটা সময় কাটাতে চলে আসুন না ৯ তারিখ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে! আমাদের পরম বন্ধু, প্রকৃতির কোমলবতী প্রাণি এই পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠুক বিশ্ব, পরিযায়ী পাখিরা সানন্দে ঘুরে বেড়াক সমস্ত বিশ্বের খোলা আকাশে, সেই শুভকামনা আমাদের সকলের, তবে তাঁদের যেন কোনো সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়, সেটি সুনশচিত করতে হবে আমাদেরকেই। আসুন, নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হই।