
বিশ্ব পানি দিবস-২০১৫; করার আছে অনেক কিছু!
ফারজানা হালিম নির্জন
জানেন নিশ্চয়ই, পৃথিবী নামের এই চমৎকার বিজ্ঞান-রহস্যে ভরা গ্রহটিকে অনেক অনেক উচুঁ থেকে দেখলে নীল দেখায়? যে গ্রহটির প্রায় ৭১ শতাংশ জুড়েই পানি, তাকে তো নীল-ই দেখাবে! চোখ বুজে একটু কল্পনা করে দেখুন, আপনার চারপাশে নীল জলরাশি আর আপনি দাঁড়িয়ে আছেন এক টুকরো সবুজ ভূ-খন্ডে। ভাবতেই খুব আরাম লাগছে, তাই না? জীবন ধারণের জন্য যে পানির কোনো বিকল্প নেই, তা তো ঐ এক প্রবাদ থেকেই বুঝে নেয়া যায়, ‘পানির অপর নাম জীবন’! বা জীবনের জন্য পানি, ঘুরিয়ে বললেও ঐ একই কথা। এই পানি আমাদের জন্য এক প্রকার সম্পদ। কেন নয়? ৭১ শতাংশের পরিমাণটি শুনে নিশ্চিন্ত মনে হলেও, এর মাত্র ৩ শতাংশের উপরই যে আমরা নির্ভরশীল,তা শুনলে কি একটু ভয় ভয় করে না? এই ৩ শতাংশ প্রাণিকূলের জন্য নেহায়েৎ কম কিছু না হলেও দিন দিন যে এর দূষণ বাড়ছে, সেই সাথে পরিমাণটাও কমে যাচ্ছে একটু একটু করে। কোনো জিনিসকে সম্পদ কখন বলা হয়? তখনই বলা হয় যখন তার উপর নির্ভরশীলতা অনেক বেড়ে যায়, আবার একই সাথে ঐ জিনিসটি সীমিত পরিমাণে থাকে!
আজ ২২ শে মার্চ, ‘বিশ্ব পানি দিবস’। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে আজকের এই দিনটিকে সারা বিশ্বে পানির জন্য উৎসর্গ করা হয়। এর পর থেকে থেমে নেই যাত্রা। প্রতিবছর নানান আয়োজন-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ২২ মার্চ কে ‘বিশ্ব পানি দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে পুরো বিশ্ব। দিবসের মূল বিষয় এক থাকলেও প্রত্যেক বছরে নতুন আঙ্গিকে একে বরণ করে নেয়া হয়। তারই এক নমুনা হচ্ছে বছরে বছরে নতুন থিম। এবারের উপাদ্য বিষয়, ‘ওয়াটার অ্যান্ড সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট’ অর্থাৎ পানির সাথে জড়িয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের টেকসই উন্নতি! উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের আজকের এই দিনের মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে জতিসংঘের আয়োজনে ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া পানির দশক, যার আধিপত্য ছিলো এই পরিচয়ে- ‘ওয়াটার ফর লাইফ’ (২০০৫-২০১৫)।
উন্নত দেশগুলোর অবস্থা না হয় নাই বা তুললাম, তারা সব দিক থেকেই উন্নত। কিন্তু আপনি কি জানেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষজনের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগ-বালাই হয় অত্যন্ত নিম্ম পর্যায়ের স্বাস্থব্যবস্থা ও পানির কারণে! জরিপে দেখা গেছে, পুরো বিশ্ব জুড়ে ৫ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে এই পানি-বাহিত রোগের কারণে। আফ্রিকার দেশগুলোর মানুষ এই ভয়াবহ মৃত্যু ঝুঁকিতে দিনের পর দিন পার করছে। কিন্তু আপনার সবচেয়ে বেশি মন খারাপ হবে, যখন দেখবেন, উইকিপিডিয়াতে উন্নয়নশীল দেশের পানির করুণ অবস্থা দেখতে গিয়ে নিদর্শন স্বরূপ বাংলাদেশের ছবি ভেসে ওঠছে।
বাংলাদেশে সুপেয় পানির উৎস হিসেবে প্রায় ৮৬ শতাংশ পানি টেনে আনা হয় ভূ-নিম্নস্থ পানি থেকে। সেই গ্রাউন্ড ওয়াটার কিংবা ভূ-নিম্নস্থ পানির এখন কী দশা? ভয়ের কথা হচ্ছে, সেখানেও দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে ক্রমাগতই। আর সেটা আমাদেরই অবহেলার জন্য। ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান আর্সেনিক, আয়রন ইত্যাদি ছাড়াও অনেক দূষিত পদার্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে সেখানে। আর উপরের পৃষ্ঠের পানি নোংরা আর দূষিত করতে কল-কারখানার অবদান তো অনস্বীকার্্য! পানি দূষণের সমস্যা থেকেই জন্ম নেয়া আরো একটি খারাপ খবর জানাতে চাচ্ছি, অতিরিক্ত পানি টেনে তোলার কারণে আমাদের এই ভূ-নিম্নস্থ পানির স্তর কিন্তু নিচে নেমে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এভাবে দূষণ আর অপচয় চলতে থাকলে কী হবে? অদূর ভবিষ্যতে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভূটান, মায়ানমার, এমন কি ভারত (!) থেকে সুপেয় বিশুদ্ধ পানি আমদানি করে আনতে হবে আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য। আমরা কি তার জন্য তৈরি?
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে আসুন এতোটুকুই সতর্ক হই নিজ নিজ জায়গা থেকে, আর কোনো পানি অপচয় করবো না। দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে যতটুকু দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ততটুকুই সুন্দরভাবে পালন করবো। একজন, দুই জন করে করে এভাবে যদি বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই সচেতন হতে পারি, তবে কেন আমাদের অন্য দেশের কাছে পানির জন্য হাত পাততে হবে?