বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২০১৫; হাওর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাজেটের সদ্ব্যবহার ও অগ্রগতি মূল্যায়ন জরুরী
বাংলাদেশের পানির জন্য হাওর মহাপরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে হাওরের সম্পদ, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। হাওর এলাকায় যাতায়াতের জন্য যে সকল ব্রীজ ও কালভার্ট রয়েছে তা ভেঙ্গে নৌ-যাতায়েতের ব্যবস্থা করতে হবে। হাওর এলাকার মানুষকে হাওরের মূল্যবোধ ও এর অস্তিত্ব রক্ষায় শিক্ষা ও মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারকে কাজ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে যুবসমাজকে সাথে নিয়ে হাওর ও জলাশয় রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আজ সকাল ১০.৩০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সভা কক্ষে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট’র যৌথ উদ্যোগে হাওর মহাপরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের বক্তরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
উক্ত বৈঠকে তিনটি উপস্থাপনা যথাক্রমে হাওর মহাপরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ন সম্পাদক মনোয়ার হোসেন, হাওর জলাশয়ের জলসেচে কাদা খুঁড়ে মাছ ধরাঃ তার প্রভাব ও প্রতিকার বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ড. নিয়াজ পাশা, কৃষি প্রকৌশলী ও হাওর ভূমিপুত্র এবং হাওর মহাপরিকল্পনা বিষয় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, মহাপরিকল্পনা প্রণয়নকারী। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম, হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডে মহাপরিচালক আফরোজা মোয়াজ্জেম, মৎস্য অধিদরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ ।
আফরোজা মোয়াজ্জেম তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৪ সালে হাওর উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠত হয়েছে। বর্তমানে হাওর উন্নয়নে কাজ চলছে। নদীর সাথে হাওর এর সংযোগ পুনরায় চালু করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া হাওড়ের জীব-বৈচিত্র রক্ষায় ও এলাকার জনগণের নানা সমস্যা সমাধানের অধিদপ্তর কাজ করছে। হাওর এলাকার স্যানিটেশন ও সুপেয় পানির নিশ্চিতসহ ১০টি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া হবে। তিনি দেশের অন্যন্যা জলাশয় রক্ষায় জলাশয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
সৈয়দ আরিফ আজাদ, মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর তার বক্তব্যে বলেন, হাওরের আদিকালের রুপ ধংস হয়ে গেছে। যে কোন মূল্যে মৎস সম্পদ রক্ষায় হাওর সংরক্ষণ করতে হবে। হাওর রক্ষায় পরিবেশ আন্দোলন, সিভিল সোসাইটি ওয়াচডগ হিসাবে কাজ করতে হবে। যে পরিকল্পনা নেয়া হয় তা হাওর উন্নয়নে কাজ করছে কিনা তা তদারকি করতে হবে। তিনি বলেন, নদী বিভিন্ন চ্যানেল গুলোতে মাছের বিচরণ এগুলো আমরা ধ্বংস করছি। অভিযান বা আইন করে তা বন্ধ করা যাবে না। ৫০০ এর বেশি মাছের অভয়াশ্রম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন নদীতে ধান চাষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কৃষি অধিদপ্তর এগুলোর অনুমতি দিচ্ছে। এত করে নদী বাঁচানো যাবে না। তাই প্রত্যেক বিভাগের কি দায়িত্ব তা সুনিদ্দিষ্ঠ করা উচিৎ।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান আতাহারুল ইসলাম বলেন, শুধু হাওর এর মান উন্নয়নের মাধ্যমে জলাভূমি রক্ষা করা যাবে না। দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা জলাভূমিতে বাঁধ নির্মাণ, স্লুইজগেট ও কালভার্টসহ বিভিন্ন প্রকল্প দেশের জলাভূমি ধ্বংস করছে। এগুলো রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় তা কখনোই ফলপ্রসু হবে না। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়েজেনে ভবিষ্যতের জন্য নদী ও জলাশয় রক্ষা করতে হবে। আমাদের অনেক বিভাগ আলে জলাভূমি রক্ষা কিন্ত তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের জলাভূমি সংরক্ষণে সমন্বয়ের কাজ করবে। নদী দূষিত হলে হাওর দূষিত হবে। এগুলো একটির সাথে আরেকটির সরাসরি সংযোগ। তাই নদী বাঁচলে হাওর বাঁচবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ আলাউদ্দিন, পবা’র নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহাবুবুল আলম, ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার রিসোর্স সেন্টার এর প্রকৌশলী বুশরা নিশাদ, ওয়েটল্যান্ড এর প্রকল্প পরিচালক আবুল হাসেম প্রমূখ।