ঢাকাইয়া ব্যাঙ; বাংলাদেশী তরুণের নতুন আবিষ্কার!

লিসান আসিব খান

পৃথিবীর বাসযোগ্য শহরের তালিকায় শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা শহর। নগরায়ন ও শিল্পায়ন যত এগিয়ে যাচ্ছে জীব বৈচিত্র্যের ওপর তত প্রভাব বাড়ছে। প্রাণীরা খুব সংবেদনশীল হওয়ায় পরিবর্তিত পরিবেশে টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গহ্বরে। ঢাকা শহরের যে কোনো সড়কে হেঁটে গেলে আমাদের চোখ থাকে মাথার ওপর ঝুলন্ত ইন্টারনেট, ডিশ, টেলিফোন এবং বিদ্যুতের লাইনের দিকে। কিন্তু এইসব ছাড়াও আমাদের শহরের অলি গলিতে আছে নাম নাজানা অনেক প্রজাতির প্রাণী। কখনও কি আমারা একটি বারের জন্য হলেও তাদের লক্ষ্য করি? না করি না। হয়তোবা আমাদের অবহেলায় আমাদের চোখের সামনে দিয়েই অনেক সময় হারিয়ে যায় অনেক দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী যিনি বর্তমানে হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তুসংস্থান ও বিবর্তন বিষয়ে পিএইচডি গবেষণারত আছেন; সাজিদ আলী হাওলাদার জ্যাম-জঞ্জালে আবদ্ধ ঢাকা শহরে সম্পূর্ণ নতুন বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ এক প্রজাতির ব্যাঙের আবিস্কার করলেন । যার নাম রাখা হল “জাকেরানা ঢাকা  Zakerana Dhaka

journal.pone.0149597.g005 (1)

গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে নতুন সন্ধান পাওয়া এই ব্যাঙের শরীরে সমগোত্রের মাইটোকন্ড্রিয়াল জিন(12S rRNA এবং 16S rRNA)এর মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় যা একে অন্যান্য প্রজাতি থেকে আলাদা হিসেবে চিহ্নিত করে। আকার আকৃতির দিক থেকে এই প্রজাতিটি কিছুটা ভিন্ন। এছাড়াও পুরুষদের স্বরথলিতে ট্র্যাপিজয়েড আকৃতির লাল দাগ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশের ডায়াগনস্টিক পার্থক্য থেকে দেখা যায় যে,তাদের নিচের  চোয়াল চেপটা যা Zakerana গোত্রের অন্যান্যদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ।

journal.pone.0149597.g002

এ প্রসঙ্গে সাজিদ আলী হাওলাদার বলেন,“ ঢাকার রাস্তার পাশের এই ব্যাঙগুলো আজ পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিত হলো নিজ পরিচয়ে। সবচেয়ে মজার বাপার হলো ব্যাঙটি আবিষ্কৃত হলো গণভবন এবং সংসদ ভবন এলাকা থেকেই। এই প্রজাতির ব্যাঙ শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও বর্ষাকালে দেখা মেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মরহুম অধ্যাপক এবং দেশের খ্যাতনামা প্রাণিবিদ ড.  প্রফেসর কাজী জাকের হুসেইন স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং ঢাকা শহরের নামেই দেয়া হলো ব্যাঙটির নাম “Zakerana dhaka”। বাংলা তে বলা যেতে পারে “ঢাকাইয়া ব্যাঙ”।

কাজী নজরুল ইসলাম হল, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,শেরেবাংলা নগর প্রভৃতি জায়গায় রাতের বেলা বিশেষ করে বৃষ্টির সময় এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত পোকা-মাকড়ভোজী এরা এবং শীতকালে এদের দেখা যায়না বললেই চলে ।

journal.pone.0149597.g001_2

ব্যাঙটির বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এবং গবেষণা পত্রটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে।

ব্যাঙ জীব বৈচিত্র রক্ষাসহ পরিবেশের ভারসাম্যরক্ষায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে এদের আবাসস্থল ধ্বংস করে চলেছি । ফলস্বরূপ এরা প্রতিনিয়ত এ পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে ৩৬ প্রজাতির ব্যাঙ হারিয়ে গেছে ।কিন্তু এর মধ্যে আশার আলো দেখিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো বাংলাদেশী তরুণ সাজিদ আলী হাওলাদার,যার মাধ্যমে হয়তোবা এদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে ব্যাঙ রক্ষায় আরও সচেতন হবে ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from EnvironmentMove.earth

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

Verified by ExactMetrics